একটি গ্রামের আত্মকথা | প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা : সেই গ্রাম গুলোর মধ্যে একটা হলাম আমি। আমাকে ঘিরে কত মানুষের বাড়ি-ঘর, গাছ পালা, ও মন্দির, বিদ্যালয় উৎসব, অনুষ্ঠান, ও সবথেকে বড়ো কথা স্বপ্ন।

একটি গ্রামের আত্মকথা

“ঐটি আমার গ্রাম, আমার স্বর্গপুরী,
ঐখানেতে হৃদয় আমার গেছে চুরি।”

ভূমিকা : 

সেই গ্রাম গুলোর মধ্যে একটা হলাম আমি। আমাকে ঘিরে কত মানুষের বাড়ি-ঘর, গাছ পালা, ও মন্দির, বিদ্যালয় উৎসব, অনুষ্ঠান, ও সবথেকে বড়ো কথা স্বপ্ন। এরকমই কত মানুষের হাসি কান্না, ভালোবাসা-বিচ্ছেদ,শাসন, অবহেলা, সব কিছুর সাক্ষী আমি।

নাম ও অবস্থান : 

আমার নাম মানিকচক (এটি একটি গ্রামের নাম) । আগে আমি অবিভক্ত বাংলার অংশ ছিলাম এখন আমি বিভক্ত বাংলার পশ্চিমবঙ্গ মালদা জেলার মধ্যে পরি। আমার পাশে রয়েছে গঙ্গা। যার এপারে থাকি আমি আর ওপারে থাকে আমার প্রতিবেশি ঝাড়খণ্ড। আমার নামের নামেই রয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েত ।

সম্পদ : 

আমার সবচেয়ে বড় সম্পদ হল- প্রকৃতিও মানুষ এছাড়া জল, পশু-পাখি ইত্যাদ। পূর্বে কৃষি ভিত্তিক হলেও বর্তমানের আধুনিকতার ছোয়ায় এখন সবাই শিল্পমুখী হয়ে যাচ্ছে। এখানের আম ও গঙ্গার মাছ সারা জায়গায় ঘুরে বেড়ায় সব মানুষের সাথে মানুষের পারম্পরিক সম্পর্ক হল আমার প্রধান সম্পদ ।

জীবনও জীবীকা : 

আমাকে ঘিরেই কত মানুষের জীবন ও জীবিকা আমার উপরে বিচরন করে কৃষিজীবী, কামার- কুমোর, চাকুরী- জীবি, ব্যবসায়ী, পুরোহিত-ডোম, আবার কেউ শহরমুখী শিল্পের সাথে জড়িত । এদের এই সমস্ত কাজগুলো আমাকে দিনে দিনে উন্নত থেকে উন্নততর করে নিয়ে যাচ্ছে ।

উৎসব ও অনুষ্ঠান : 

আমার উপর হিদু ও মুসলিম মানুষের প্রাধান্য দেখা যায়। তাই উৎসব ও অনুষ্ঠানও হিন্দু ও মুসলিম কেন্দ্ৰিক । তবে অন্যান্য অনুষ্ঠানেও আমার সমস্ত সন্তানেরা সমানভাবে অংশ গ্রহণ করে। এখানের যে সমস্ত অনুষ্ঠান আমাকে সমৃদ্ধ করেছে সেগুলো হল দুর্গাপূজা, কালিপূজা , ঈদ, মহরম, বড়দিন, ইত্যাদি।

সাংস্কৃতিক উৎসব : 

শুধু ঠাকুর দেবতা কেন্দ্রিক অনুষ্ঠান নয়, সাংস্কৃতিক উৎসবের জন্য বহু মানুষ আমার বুকে উপস্থিত হয় । এই উৎসবগুলো হল প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলা, গান নাচ, নাটক, দোল, রাখি, ইত্যাদি ।

আমার পরিবর্তন : 

আমাকে ঘিরে আমার মানুষদের পরিবর্তন আমাকে উন্নত থেকে উন্নততর করে তুলেছে ১০ বছর আগের আমি আর এখনকার আমির মধ্যে বিচার পার্থক্য যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলাটাই স্বাভাবিক। পুরোনোর পাশাপাশি নতুনেও আমি হয়ে উঠেছি অভ্যস্ত । আগে যেখানে নিশিত রাতে ঝিঁ-ঝিঁ পোকার ডাকে অন্ধকারে সময় কাটত না, এখন সেখানে জ্বলজ্বল করে বৈদ্যুতিক বাল্ব। ঝিঁ-ঝিঁ পোকার ডাকের বদলে শুনতে পাওয়া যাওয়া যায় বড়ো বড়ো মাইকের আওয়াজের ডাক, মাটির বাড়ির পরিবর্তে হয়েছে ইটের বাড়ি, কাচা রাস্তা হয়েছে পাকা,আগের টানা গাড়ি পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে মেশিন চলিত যান। মানুষ হয়েছে শহরমুখী, যন্ত্র চালিত, পরিবর্তনকামি ।

উপসংহার : 

সবশেষে বলতে গেলে আমার বুকেই সভ্যতার জন্ম। আমি দেখেছি এই সভ্যতা- সৃষ্টি হতে। আমিই দেখেছি অজপাড়া (এটি একটি গ্রামের নাম) গ্রামকে ধীরে ধীরে শহর হতে। তবে দুঃখ এটাই আমার বহু সন্তান বাইরে থাকে। তবে এখানে যারা থাকে তাদের কে নিয়ে আমি আনন্দে মেতে থাকি।

1 comment

  1. Anonymous
    Phaltu lekha