একটি গ্রামের আত্মকথা
“ওই আমার গ্রাম, যেখানে মেলে হৃদয়ের ঠিকানা, সবুজে ঘেরা প্রকৃতি, শান্তির বয়ান এখানে লেখা।”
ভূমিকা
আমি একটি গ্রাম, সময়ের নিরব সাক্ষী। আমার গায়ে মাখা থাকে মানুষের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখের গল্প। প্রকৃতির কোলে, স্নিগ্ধ পরিবেশে, আমি বেঁচে আছি আমার মানুষদের ভালোবাসায়।
পরিচিতি ও অবস্থান
আমার নাম মানিকচক। আমি মালদা জেলার এক ঐতিহ্যবাহী গ্রাম, যার পাশ দিয়ে গঙ্গা বয়ে গেছে। আমার এক প্রান্তে ঝাড়খণ্ড আর অন্য প্রান্তে পশ্চিমবঙ্গের হৃদস্পন্দন। প্রকৃতি আমাকে নিজের হাতে সাজিয়েছে।
সম্পদ
আমার আসল সম্পদ হলো আমার মানুষ আর প্রকৃতি। এখানকার আম ও গঙ্গার তাজা মাছ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও পরিচিত। আমার গাছপালা, পাখি আর উর্বর মাটি আমাকে প্রকৃতির রত্নভাণ্ডারে পরিণত করেছে।
জীবন ও জীবিকা
আমার গ্রামজীবনের সঙ্গে জড়িত কৃষক, কামার, কুমার আর ব্যবসায়ী। কেউ মাটি চষে ফসল ফলায়, কেউ শিল্পের সন্ধানে শহরমুখী হয়। আমি তাদের পরিশ্রমের সাক্ষী, তাদের প্রত্যেকের গল্পে আমার নাম লেখা থাকে।
উৎসব ও অনুষ্ঠান
আমার বুকে উদযাপিত হয় দুর্গাপূজা, ঈদ, মহরম, এবং বড়দিনের মতো উৎসব। ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে সবাই একসঙ্গে আনন্দ করে। আমার প্রতিটি উৎসবে ফুটে ওঠে মিলনের বার্তা।
সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল
ধর্মীয় উৎসবের পাশাপাশি এখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও বেশ জনপ্রিয়। গ্রামীণ খেলা, গান, নাচ, নাটক, এবং দোলযাত্রার মতো উৎসব আমাকে প্রাণবন্ত করে তোলে। আমি গর্বিত, কারণ আমার মানুষ তাদের সংস্কৃতি আগলে রেখেছে।
আমার বিবর্তন
সময় আমাকে বদলে দিয়েছে। একসময় কাঁচা রাস্তা ছিল, এখন সেখানে পাকা পথ তৈরি হয়েছে। মাটির বাড়ি ইটের দালানে রূপ নিয়েছে। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকের জায়গায় এসেছে বিদ্যুতের আলো। আমি সময়ের সঙ্গে পাল্টেছি, কিন্তু আমার প্রাণশক্তি রয়ে গেছে আগের মতো।
উপসংহার
আমার বুকে সভ্যতার সূচনা হয়েছে, আর আমি তা বেড়ে উঠতে দেখেছি। যারা দূরে থেকেও আমাকে মনে রেখেছে, তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমি শুধু একটি গ্রাম নই, আমি আমার মানুষদের স্বপ্নের ঠিকানা।