একটি নদীর আত্মকথা
আমার নাম গঙ্গা। আমি ভারতের সবচেয়ে বড় নদী, সবচেয়ে পবিত্র নদীও বটে। হিমালয়ের যেখানে আমার জন্ম, সেই গোমুখ হিমবাহ অতি দুর্গম। কিন্তু ভারতে প্রবেশের পর সর্বত্র আমার জলধারা পুত-পবিত্র বলে গণ্য হয়, ভারতবাসীর কাছে আমি মাতৃস্বরূপা। বাস্তবিকই উত্তর ভারতের যে তিনটি রাজ্যের মধ্য দিয়ে। আমি প্রবাহিত হয়েছি, সেই রাজ্যগুলির প্রায় সব বিখ্যাত নগর এবং শহরই আমার তীরে অবস্থিত। আমার পবিত্র জলধারায় আমার দুই তীর যেমন সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা হয়েছে, তেমনি দু তীরে গড়ে উঠেছে অগণিত তীর্থক্ষেত্র। কত মন্দির আর উপাসনাস্থানের সমারোহ সেখানে, অগণিত তীর্থযাত্রী পুণ্যসঞ্চয়ের আশায় যুগ যুগ ধরে সেখানে প্রতিদিনই সমবেত হচ্ছেন। প্রবাদ আছে, আমার জল স্পর্শ করলে নাকি সব পাপ ধুয়ে মুছে যায়। তাই তীর্থযাত্রীরা তো বটেই, সাধারণ মানুষও আমার জলে স্নান করেন আগ্রহ সহকারে। আমার জল ব্যবসা-বাণিজ্যেও সাহায্য করে। বহু জায়গায় যাতায়াতেরও সুবিধে করে দিই আমি। কত নাকো, স্টীমার, লঞ্চ এবং ছোট জাহাজ এই কারণে আমার বুকের উপর দিয়ে চলে। মানুষের এভাবে পকার করতে পেরে আমি গর্বিত। কখনও কখনও আমি ক্রুদ্ধ হয়ে উঠি, তখন ফুলে-ফেঁপে ওঠে আমার বুক। জলধারা হয়ে ওঠে উচ্ছল ও বাঁধনহারা-নদীর দু-কূল প্লাবিত হয় ঘরবাড়ি নষ্ট হয়, বহু গবাদি পশু ও মানুষের প্রাণহানি হয়, রাস্তাঘাট ভেঙে ধ্বংসে পড়ে। কিন্তু প্রকৃতির রাজত্বে অখণ্ড সুখ বলে কিছু নেই— সুখ আর দুঃখ নিয়েই এই জগৎ।