তোমরা যারা যারা পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকারের উপর একটি প্রবন্ধ রচনা লিখতে চাইছো তারা এই লেখাটি লিখে নাও
পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার
ভূমিকা:
জল, বাতাস, মাটি, আলো, শব্দ, বন্যপ্রাণী, গাছপালা, এবং কীটপতঙ্গসহ বিভিন্ন উপাদানকে একসঙ্গে পরিবেশ বলা হয়। আধুনিক যন্ত্রযুগের বিকাশ এবং নগর সভ্যতার কিছু নেতিবাচক প্রভাবের ফলে আমাদের এই পরিবেশ ক্রমে দূষিত হচ্ছে। পরিবেশ দূষণ এখন পৃথিবীর জন্য এক গুরুতর সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা আমাদের জীবনের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। তাই পরিবেশ রক্ষার জন্য কার্যকর প্রতিকার আবশ্যক।
পরিবেশ দূষণের শ্রেণিবিভাগ:
পরিবেশ দূষণ বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। এতে মূলত চারটি প্রধান শ্রেণী রয়েছে:
- জল দূষণ: জল আমাদের জীবনদায়িনী উপাদান। কিন্তু কলকারখানার দূষিত বর্জ্য, অপ্রয়োজনীয় রাসায়নিক পদার্থ, এবং বর্জ্য নিষ্কাশনের কারণে জল দূষণ আজ এক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে মানুষ, মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণী শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
- মাটি দূষণ: বিভিন্ন সার, কীটনাশক, এবং শিল্পের বর্জ্য পদার্থ মাটিকে দূষিত করছে। শহরাঞ্চলে আবর্জনা সঞ্চিত হওয়া, মাটি ক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, যা পরিবেশগত ভারসাম্যকে বিঘ্নিত করছে এবং নানা সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটাচ্ছে।
- বায়ু দূষণ: কলকারখানার ধোঁয়া, যানবাহনের নির্গমন গ্যাস, বিমানের ধোঁয়া ইত্যাদি বায়ুকে দূষিত করছে। এ কারণে বায়ুর গুণগত মান হ্রাস পাচ্ছে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি সৃষ্টি হচ্ছে।
- শব্দ দূষণ: যানবাহনের শব্দ, বিমান চলাচল, বাজি-পটকার আওয়াজ, কল-কারখানার উচ্চস্বরে শব্দ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। শব্দ দূষণ মানুষের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
প্রতিক্রিয়া:
পরিবেশ দূষণের প্রভাব অতীব মারাত্মক। বহু প্রজাতির প্রাণী, বিরল পাখি, এবং মূল্যবান উদ্ভিদ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। মানুষও নানা রোগ-ব্যাধির শিকার হচ্ছে এবং মৃত্যুহারের হার বাড়ছে। এর ফলে জীবনযাত্রা সংকটময় হয়ে পড়েছে।
প্রতিকার:
পরিবেশ দূষণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আন্তর্জাতিকভাবে সচেতনতা বাড়াতে হবে। গণমাধ্যম যেমন সংবাদপত্র, টিভি, রেডিও, এবং সোশ্যাল মিডিয়া এই প্রচারকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতার বীজ বপন করতে হবে। জল ও মাটি দূষণ রোধে সরকারের আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। শব্দ দূষণ রোধে উচ্চ আদালতের নির্দেশাবলী মেনে চলা জরুরি। বৃক্ষনিধন বন্ধে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। জনগণকে সচেতন করার জন্য বিশ্ব পরিবেশ দিবস (৫ই জুন) পালনের গুরুত্ব অপরিসীম।
উপসংহার:
পরিবেশ সংরক্ষণে আমাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সভ্যতার অগ্রগতি যেন পরিবেশের ক্ষতি না করে, সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। যদি আমাদের পরিবেশ দূষণমুক্ত থাকে, তবে পৃথিবী আরও সুখময় ও সুন্দর হয়ে উঠবে। তাই পরিবেশ রক্ষার জন্য সকলকে সচেতন হতে হবে এবং যথাসম্ভব প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।